সাহাবুল আলম নাটোর প্রতিনিধি শারীরিক ভাবে অক্ষম কানাইলাল মাহাতো (১০০) তার স্ত্রী ফুলবতি মাহাতো (৯২) বয়সের ভারে অনেক টাই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন, চোখে ঝাপসা দেখেন, কানেও কম শোনেন। পুত্র-পুত্রবধূ-নাতনি,কন্যারা থাকেন অন্যত্র আলাদা ঘরে। উপড়ি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন দুজন বৃদ্ধা।
পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের আসমানী কবিতার দু -চারটি লাইন না বললেই নয়!
আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। বাড়িতে নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি
একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি। একটুখানি হাওয়া দিলে ঘর নড়বড় করে, তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।
ঠিক তেমনই বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের বাগডোব একটি গ্রাম। যে গ্রামের মহাতোপাড়াতেই ১০০ অধিক বয়স্ক বৃদ্ধা স্বামী স্ত্রীর বসবাস।বয়সের ভারে কানাই লাল মাহাতো আর চলতে পারেনা, কোন কাজ কর্ম করতে পারেন না, এক সময় কানাইনাল মাহাতো, বাসের চাটাই, কুঞ্চির তৈরি মাটির কাটার ঢাঁকি,ঝাঁকা,মাছ ধরার পলো, গরুর মুখে দেবার টোনা, মাছ রাখার জন্য খালোই তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে যা আয় হতো তাতেই তাদের সংসার চলত এমনটাই জানান বৃদ্ধার প্রতিবেশী রবীন্দ্রনাথ( রবি)মাহাতো।
বৃদ্ধার স্ত্রী ফুলবতি মাহাতো(৯২) বলেন আমার স্বামীর আর শক্তি সামর্থ্য নেই, চোখেও কম দেখে কানেও কম শোনে, হাঁটতে চলতে ফিরতে পারে না, তাই আমাদের চলার পথ বন্ধ হয়ে গেছে।আমার তিনটা ছেলে এবং দুটা কন্যা সন্তান রয়েছে তিন সন্তানের মধ্যে দুইটা ছেলেই আজ থেকে ১০/১২ বছর পূর্বে মারা গিয়েছে, তার পুত্রবধূ হয়েছেন বিধবা তাদেরও বাচ্চাকাচ্চা রয়েছে।কোন মতো কাজ কর্ম করে সংসার চলে তাদের
আমার সোয়ামীর সামান্য জমি জমা রয়েছে যা শুধু বাড়ির ভিটা যার পরিমাণে বলেন এক দেড় কাঠার মত যৎসামান্য ।আমাদের দুটো কন্যা সন্তান রয়েছে। তাদেকেও বিয়ে দিয়েছিলেন আমার সোয়ামী কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস স্বামীর ঘরে তাদের ঠাঁই হয়নি আমতি রাণীর, হতে হয়েছে স্বামী পরিত্যাক্তা।
আর ছোট মেয়ে লক্ষী রানী মাহাতো হয়েছেন বিধবা তারাও এসে আমার বাড়িতেই বসবাস করছে। তাদের ও নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায়। একজন হার্ট ঝাড়ু দেয়, আর অন্যজন অন্যের গৃহে কাজ করে।
আর ছোট ছেলেটির নাম কালিপদ তারো রয়েছে স্ত্রী সন্তান ও ছেলে-মেয়ে সে যা কামাই রুজি করে তা দিয়ে কোনমতে সংসার চলে তাদের। ভাত কাপড় দেবার মত অবস্থা নেই তারও।
স্বরজমিনে গিয়ে দেখা যায় কানাইলাল মাহাতোর পরিবারটি যে, ঘরটিতে বসবাস করে , ঘরের চালাটি চারটি ভাঙ্গা টিন দিয়ে ছাপরা দেওয়া। টিন গুলো ছিদ্র আর বেশিরভাগই ফুটো যা রাত্রিবেলা চাঁদের আলো যেন ঘর থেকেই দেখা যায় । বৃদ্ধার স্ত্রী কিছু পাটকাঠি, ছন চেয়ে,কুড়িয়ে এনে সঙ্গে কিছু পেপার কুড়িয়ে বেড়া দিয়ে, উপড়ি ঝুপড়ি ঘরেই মধ্যে তাদের বৃদ্ধাদের বসবাস।
বৃদ্ধার স্ত্রী ফুলবতি মাহাতো আবেগঘন কন্ঠে তাদের ভাষায় বলছিলেন, হামরাতো কাউকে বলতে পারিনা, হামাগারে তো কেউ নাই, যে হামাদের কে ঘর করে দেবে, জায়গা আছে খানেক কিন্তু ঘর করার মত টাকা পয়সা হামাদের নাহি, মেম্বার, চেয়ারম্যানকে তো অনেকবার বলেছি হামাদেরকে একটা ঘর করে দেওয়ার জন্য। তারা বলেছে সরকারি সুযোগ-সুবিধা আসলে ঘর করানোর ব্যবস্থা করে দিবে ।এখন আর কত দিন গেলে আর কত বয়স হলে হামাদের ঘর করে দেবে, হামরা তা বলতে পারিনা । হামাদের শুধু উপরে আছে উপরওয়ালা আর আছে ভগবান, তিনি হামাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এখন হামি হাটে -বাজারে, মাইনষের বাড়ি ভিক্ষা করে যা পাই, যা চাল -ডাল, তরি-তরকারি পাই তাহা খাইয়া হামরা বেঁচে আছি।
কানাইলাল বলেন হামরাতো শুনেছি জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকি দরিদ্র অসহায়দের ভূমিহীনদের কে নাকি ঘর করে দিচ্ছে, হামরা আর কতদিনে বাঁচবো ,হামাদের সাথে যারা সঙ্গী সাথী ছিল তারা তো অনেক শ্মশানে চলে গেছে। আর কত বছর বয়স হলে ঘর পাব সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবো জানিনা এমনটাই বলছিলেন বৃদ্ধা কানাইলাল । শেষ বয়সে যদি একটা ঘর পেতাম তো হামরা স্বামী-স্ত্রী মইরাও শান্তি পেতাম।
ঘরের বিষয়ে ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য মো: ওয়ারসেল আলী আকন্দর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন যাদের জায়গা আছে ঘর নেই তাদের একটা তালিকা এসিল্যান্ডের অফিসে জমা দেওয়া হয়েছিল, বড়াইগ্রাম ভূমি অফিসার মোঃ শাহাদৎ হোসেন স্বর জমিনে তদন্ত করেছিলেন। কিন্তু কেন বৃদ্ধা ঘর পেল না তার বিষয় সঠিক তথ্য তিনি জানেন না।
বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো মারিয়াম খাতুন বলেন যারা আদিবাসী সম্প্রদায় আছে এবং যাদের নিজস্ব জায়গা আছে কিন্তু ঘর নেই,তাদের জন্য প্রতি বছরই ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ আসে। যদি বৃদ্ধার নিজস্ব জমি থাকে এবং ঘর না থাকে তাহলে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একটি মানুষও গৃহীন থাকবে না। প্রত্যেক দরিদ্র অসহায় ভূমিহীন মানুষেরাই পর্যায়ক্রমে ঘর পাবে। এর জন্য ইউপি চেয়ারম্যান অথবা মেম্বারের মাধ্যমে আবেদন করে পাঠালে যাতে উনারা ঘরটি পায় তার ব্যবস্থা করে দেব বলে আশ্বাস প্রদান করেন
Leave a Reply